মর্ত্যে আসার তোড়জোড়

কাল মহালয়া ছিল । ধীরে ধীরে সিঁদুর রঙা সূর্যটা দিগন্ত পাটে নেমে যেতেই ঝুপ করে দিনটা পানকৌড়ি রঙা আকাশের সঙ্গে মিশে গেল, দূরে আজানের শব্দে যেন মঙ্গলশঙ্খ বেজে উঠলো । অনেক রাতে দ্বিতীয়ার চাঁদটা যখন নারকেল, সুপারি আর কলা গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল ঠিক তখনই ভাঙ্গা বাড়ির কোণ থেকে লক্ষ্মী প্যাঁচাটা উড়ে গিয়ে রাজবাড়ীর হাঁসের পাশে গলাগলি করে গল্প জুড়ে দিল । একটা শিউলীফুল শিশিরের ধাক্কায় টুপ করে পড়লো মহিষাসুরের গোঁফে, সে বেচারা ঘুম চোখেই আঁতকে উঠে একবার এদিক ওদিক দেখে নিয়েই তার বাহনে চড়ে দৌড়ল । তৃতীয়া তিথির দুপুর বেলা, ময়ূরী তখন তাক থেকে তোরঙ্গ নামিয়ে ময়ূরের পেখমটা ঝেড়ে টেরে গুছিয়ে রাখে আলনার উপর, সময় যে হয়ে এলো ওদের রওনা হতে আর মাত্র দুটো দিন বাকি। চতুর্থীর বিকেলে ধুতি খুঁজতে গিয়ে কুলুঙ্গিতে থাকা পুরনো ধামাটা হঠাৎ পড়ে গেল, উফফ ধুতিটা যে কোথায় গেল, গণেশ দাদাটা কি যে করেনা এসব কি ইঁদুরের পড়ার জিনিস ! ওদিকে চিড়িয়াখানার সিংহটা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিল, কাশ ফুলের সুতো নাকে ঢুকে সুড়সুড় করতেই হাঁচতে হাঁচতে দৌড় দিল এক্কেবারে । পঞ্চমীর অবেলায় পানের বাটা নিয়ে মা যেই না একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল অমনি সব দলেবলে হাজির ! আর বাবাও তেমনি, নন্দী ভৃঙ্গীর হাতে ছিলিমটা ধরিয়ে যথারীতি মায়ের সাথে ঝগড়া জুড়ে দিল, আরে মায়ের সাথে পেরে ওঠা কি চাট্টি খানি কথা ! যেই না মায়ের বলা যে, “ঠিক আছে এবার তাহলে আর ফিরছি না” অমনি বাবার গাঁজার নেশা উধাও । নন্দী এসে কানে কানে বলে বাবা এই বেলা চেপে যাও নয়তো দক্ষযজ্ঞী শুরু হলে তুমি বাবা এই বুড়ো হাঁড়ে আর কিন্তু তাণ্ডব করতে পারবে নি, তাই ভাল চাও তো থামো দিকিনি । অমনি বাবা মায়ের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, দুগ্গা দুগ্গা, তাড়াতাড়ি ফিরে এসো গিন্নি !!